SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য - NCTB BOOK

খেলাধুলা শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। শরীর ও মনের সুস্থতার উপরই নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি। খেলাধুলা শরীর গঠনের এক অন্যতম উৎস। খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় জীবন বিকাশের পথ, পায় জীবন সংগ্রামের দৃঢ় মনোবল। সব খেলাতেই জয়-পরাজয় থাকে। খেলাধুলা মানুষের মধ্যে জয় পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করে। জীবনকে পরিচ্ছন্ন, গতিময় ও সাবলীল করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা । খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক গুণাবলি অর্জন করে এবং নিজেকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে।

বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

• দেশের খেলাধুলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত অসুবিধা বর্ণনা করে এসব দূরীকরণের উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব;


• ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, হকি, অ্যাথলেটিকস ও সাঁতারের নিয়মকানুন বর্ণনা করতে পারব;


• ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, হকি, অ্যাথলেটিকস ও সাঁতারের নিয়মকানুন মেনে অনুশীলন করতে পারব;


• প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী কমপক্ষে একটি খেলায় বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ করে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারব ।

পাঠ-১ : খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো সামাজিক : প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব অনেকাংশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায়। বর্তমানে শরীরিক শিক্ষাকে শিশুর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ও সামাজিকীকরণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শরীরিক শিক্ষা বিষয়টির সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন।


শারীরিক শিক্ষার ব্যবহারিক দিক হচ্ছে খেলাধুলা। খেলাধুলার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সুপরিকল্পিত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই জরুরি। বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্রীড়ায় উৎসাহিত করার জন্য শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দুইটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও বিনোদনমূলক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিদ্যালয় বাৎসরিক একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করেই ক্রীড়া ক্ষেত্রে তাদের ক্রীড়া কার্যক্রম শেষ করে থাকে।


মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাঁতার জনে না। সাঁতার না জানার কারণে তারা বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় পড়ে এমনকি মৃত্যুবরণ করে। যদি প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি পুকুর বা সুইমিংপুল থাকে তবে শিক্ষার্থীরা সাঁতার শিখে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাবে।


বিদ্যালয়গুলোতে একদিকে রয়েছে সঠিক খেলার মাঠের অভাব তেমনি রয়েছে মানসম্মত ক্রীড়া সামগ্রীর ঘাটতি। অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে খেলাধুলা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠলে ভবিষ্যতে জাতীয় স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এজন্য স্থানীয়ভাবে স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুল নির্মান এবং খেলার মাঠের উন্নয়ন করতে হবে। সেই সাথে বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত ক্রীড়া সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

কাজ-১ : নিজ নিজ বিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে লেখ।
কাজ-২ : ক্রীড়াঙ্গনের মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে কী কী করা যায় তা পরামর্শ করে লেখ।

আমাদের দেশে বিভিন্ন খেলার প্রচলন রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি খেলার নিয়মকানুন ও অনুশীলনের কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো।

পাঠ-২ : ব্যাডমিন্টন 

ইতিহাস : ১৮৭০ সালে ভারতের পুনায় প্রথম ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয়েছিল। জনৈক ইংরেজ সৈনিক কর্তৃক এই খেলা ভারত থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার আগে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। বো-ফোটের ডিউক ব্যাডমিন্টন খেলায় খুব আগ্রহী ছিলেন এবং তার গ্রামের নাম ব্যাডমিন্টন থেকে এই নামের উৎপত্তি। এই খেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের গ্লুসেস্টার সায়ারে বো-ফোটের ডিউকের নিজ বাড়িতে। ১৯৩৪ সালে International Badminton Federation (I.B.F) ইংল্যান্ডের সিলটেন হামে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬৬ সালে এশিয়ান গেমসে ব্যাডমিন্টন খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে গঠন করা হয় Bangladesh Badminton Federation (B.B.F)। বাংলাদেশে ব্যাডমিন্টন একটি জনপ্রিয় খেলা। গ্রামে-গঞ্জে সকল বয়সের ছেলেমেয়েরা এই খেলা খেলে থাকে । 

আইনকানুন :

ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট

১. খেলার কোর্ট— ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে, একক ও দ্বৈত ।

২. একক কোর্ট— দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট।

৩. দ্বৈত কোর্ট— দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট এবং
প্রস্থ ২০ ফুট।


৪. কোর্টের দাগ— সকল দাগের রং হলুদ বা সাদা হবে ।


৫. পোস্ট- সমতল একটি কোর্টের মেঝে থেকে খুঁটি দুটির উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি হবে। এই পোস্ট পার্শ্ব রেখার উপরে অথবা তা থেকে একটু দূরে মাটিতে পুঁতলেও চলবে।


৬. নেট— খুঁটির কাছে মেঝে থেকে নেটের উপরিভাগের উচ্চতা হবে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। নেটটি ২ ফুট চওড়া থাকবে ।

৭. শাটল— খেলার জন্য একটি শাটল কক থাকবে।


৮. একক খেলা— যে খেলায় প্রতিপক্ষে একজন করে খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে, তাকে একক খেলা বলে।

শাটল কক

৯. দ্বৈত খেলা— যে খেলায় প্রতিপক্ষে দুজন করে খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে, তাকে দ্বৈত খেলা বলে ।

১০. টস— টস বিজয়ী প্রথম সার্ভিস করবে বা প্রথম রিসিভ করবে। বিপক্ষ খেলোয়াড় কোর্টের বাম দিক পছন্দ করবে।


১১. বিচারক— খেলা পরিচালনার জন্য ১ জন রেফারি, ১ জন আম্পায়ার, ১ জন স্কোরার, ২ জন অথবা ৪ জন লাইন জাজ থাকবেন ।


১২. গেম— একক ও দ্বৈত উভয় খেলায় ২১ পয়েন্টে গেম হয়। উভয় খেলোয়াড় বা দল ২০-২০ পয়েন্ট অর্জন করলে সেক্ষেত্রে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়লাভ করতে হবে, অর্থাৎ ২২-২০, ২৫- ২৩ পয়েন্টে। উভয় দলের পয়েন্ট সমান হওয়াকে ডিউস বলে। মনে রাখতে হবে, এভাবে সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্টের মধ্যে অবশ্যই গেম শেষ করতে হবে। চূড়ান্ত সেটে ১১ পয়েন্ট হলে সাইড পরিবর্তন হয়। তিনটি গেমের মধ্যে যে বা যে দল দুই খেলায় জিতবে, সে বা সেই দল বিজয়ী হবে।


১৩. একক খেলার সময় সার্ভিসকারীর পয়েন্ট শূন্য বা জোড় সংখ্যা হলে খেলোয়াড় তাদের ডান দিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে এবং বিজোড় সংখ্যা হলে বাম দিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে। প্রতি পয়েন্টের পর খেলোয়াড়গণ তাদের সার্ভিস বা রিসিভ কোর্ট বদল করবে।


১৪. দ্বৈত খেলার সময় প্রথম সার্ভিসের জন্য ডানদিকের খেলোয়াড় কোনাকুনি বিপক্ষের কোর্টে সার্ভিস করবে। যাকে সার্ভিস করা হবে কেবল সেই খেলোয়াড় সার্ভিস গ্রহণ করবে। কোনো খেলোয়াড় পরপর দুইবার সার্ভিস করতে পারবে না । প্রথম গেমে বিজয়ী খেলোয়াড় দ্বিতীয় গেমে সার্ভিস শুরু করবে।


১৫. সার্ভিসের সময় সার্ভারের দুই পা মাটি স্পর্শ করে থাকবে।


১৬. সার্ভিস করার সময় শাটল নেটে লেগেও যদি ঠিক কোর্টে পড়ে তবে সার্ভিস ঠিক হয়েছে বলে ধরা হবে ।


১৭. শাটল দাগ স্পর্শ করলেই সার্ভিস ঠিক হয়েছে বলে ধরা হবে।


১৮. নেট অতিক্রম করে কেউ শাটলে আঘাত করতে পারবে না এবং খেলা চলাকালে কেউ র‍্যাকেট বা শরীরের
কোনো অংশ দিয়ে নেট ও পোস্ট স্পর্শ করতে পারবে না ।

কলাকৌশল : ব্যাডমিন্টন খেলা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হলে প্রয়োজন হাত ও কজির নমনীয়তা এবং পায়ের কাজ। ব্যাডমিন্টন খেলার মৌলিক কলাকৌশল হলো-


১. র‍্যাকেট ধরা (Gripping )
২. পায়ের কাজ (Foot Work)
৩. সার্ভিস (Service )
৪. ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক (Forehand Stroke)
৫. ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক (Backhand Stroke)
৬. মাথার উপর দিয়ে মারা (Overhead Stroke)
৭. নেটের কাছে মারা (Net Stroke)

র‍্যাকেট ধরা 

১. র‍্যাকেট ধরা (Gripping) : র‍্যাকেট সঠিকভাবে ধরার উপরই ব্যাডমিন্টন খেলা অনেকটা নির্ভর করে। এবার ডান হাতের তালু উপুড় করে গ্রিপের শেষ প্রান্তে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনী সামনের দিকে প্রসারিত করে ইংরেজি 'V' বর্ণের মতো করে গ্রিপ ধরবে। ভালো গ্রিপ ধরা আয়ত্তে এলে ভালো খেলতে সাহায্য করবে।

২. পায়ের কাজ (Foot Work) : ব্যাডমিন্টন খুব দ্রুতগতির খেলা। তাই পায়ের কাজ খুব দ্রুত হয়ে থাকে । কাজেই বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খুব দ্রুত গতিতেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ ব্যাপারে পায়ের কাজটা সবচেয়ে বেশি। দ্রুত গতির খেলায় ফুটওয়ার্ক ভালো না হলে শাটল কক সঠিকভাবে সঠিক স্থানে পাঠানো বা ফেরানো যায় না। ভালো ফুটওয়ার্ক আয়ত্ত করতে পারলেই দ্রুততার সাথে শাটল ককের কাছে পৌঁছতে পারে এবং পছন্দমতো কোর্টে শাটল কক ফেরত পাঠাতে পারে।

৩. সার্ভিস (Service) : একজন খেলোয়াড় নিয়ম-কানুন মেনে খেলার শুরুতে এবং প্রতি পয়েন্টের শুরুতে প্রতিপক্ষের কোর্টে শাটল কক পাঠানোকে সার্ভিস বলে । সার্ভিসটি বিপক্ষ কোর্টের এমন জায়গায় পাঠাতে হবে, যাতে বিপক্ষ খেলোয়াড়দের ফেরত পাঠাতে অসুবিধা হয়। সার্ভিস করার সময় পা ফাঁক করে বাম পা ডান পায়ের কিছুটা সামনে নিয়ে দাঁড়াবে। শরীরের ওজন পিছনের পায়ের উপর থাকবে। বাম হাতে শাটল কক ধরে, ডান হাতের র‍্যাকেটকে পিছনের দিক থেকে আনার মুহূর্তে শাটল কক ছেড়ে দিয়ে কোমরের নিচে

আঘাত করে বিপক্ষ কোর্টে পাঠাবে। শাটল কক ও র্যাকেটের সংযোগের সাথে সাথে দেহের ওজন বাম পায়ের

সার্ভিস

উপর চলে আসবে। সার্ভিস দুই প্রকার, শর্ট সার্ভিস ও লং সার্ভিস। শর্ট সার্ভিসে নেটের কাছাকাছি বিপক্ষের সার্ভিস কোর্টে শাটল কক পাঠানো হয় এবং লং সার্ভিসে কোর্টের পিছনের অংশে পাঠানো হয়।

৪. ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক (Forehand Stroke) : হাতের তালুকে সামনে রেখে ডানহাতি খেলোয়াড় ডান
দিকে এবং বামহাতি খেলোয়াড় বাম দিকে শাটল কক মারলে তাকে ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক বলে।

ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক
ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক

৫.ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক (Backhand Stroke): সঠিকভাবে র‍্যাকেট ধরে হাতের তালু পিছনের দিকে করে ডান হাতি খেলোখাড়ের ডান কাঁধ এবং বাম হাতি খেলোয়াড়ের বাম কাঁধ নেটের দিকে রেখে শাটল কক মারলে তাকে ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক বলে।

৬. মাথার উপর দিয়ে মারা (Overhead Stroke) : সাধারণত “স্ম্যাশ' বা চাপ মারার কাজে এই স্ট্রোক ব্যবহার করা হয়। এই স্ট্রোকে 'ফোর হ্যান্ড' ও 'ব্যাক হ্যান্ড' দুটোই ব্যবহার করা যেতে পারে। শাটল ককের নিচে এসে র্যাকেট উঁচু করে লাফ দিয়ে যতটুকু উঁচুতে স শাটল কককে আঘাত করবে।

নেট স্ট্রোক

৭. নেটের কাছে মারা (Net Stroke) : শাটল কক যখন নেটের খুব কাছাকাছি পড়ে, তখন এই স্ট্রোকের সাহায্যেই শাটল কককে মারতে হয়। এই স্ট্রোকের ব্যবহারের জন্য হাতের সূক্ষ্মতার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ হাতের উপর দখল থাকলে শাটল কক নেটের খুব কাছে ফেলা সম্ভব হয়। এর জন্য প্রচুর অনুশীলনের প্রয়োজন।

কাজ-১ : ব্যাডমিন্টন খেলায় র্যাকেট ধরার কৌশল প্রদর্শন কর। 

কাজ-২ : ব্যাডমিন্টন খেলায় সার্ভিস করার কৌশল প্রদর্শন কর।

পাঠ-৩ বাস্কেটবল

ইতিহাস – বাস্কেটবল খেলার প্রথম প্রচলন হয় ১৮৮১ সালে আমেরিকায়। এ খেলার জনক হলেন আমেরিকার স্প্রিং ফিল্ডে ওয়াই.এম.সি.এ কলেজের শারীরিক শিক্ষার পরিচালক ড. জেমস নেইসমিথ। ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসাবে বাস্কেটবল অন্তর্ভুক্ত হয়। আমেরিকার জাতীয় খেলা বাস্কেটবল। পৃথিবীর বহু দেশে এখন বাস্কেটবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই উপমহাদেশে প্রথম বাস্কেটবল খেলা শুরু হয় কলকাতার ওয়াই.এম.সি.এ কলেজে ড. জন হেনরি গ্রের উদ্যোগে। বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলগুলোতে প্রথম বাস্কেটবল খেলা শুরু হয়। বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশনের উদ্যোগে বর্তমানে দেশে আন্তঃক্লাব ও জাতীয় পর্যায়ে বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এ ছাড়া আন্তঃস্কুল, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃক্যাডেট কলেজ পর্যায়ে বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা হয় ৷

বাস্কেট বল খেলার কোর্ট

আইনকানুন 

১. কোর্ট- বাস্কেটবল কোর্টের দৈর্ঘ্য ২৮.৬৫ মি এবং প্রস্থ ১৫.২৪ মি । স্কুল-কলেজের ছাত্রদের জন্য দৈর্ঘ্য হবে ৮৪ ফুট (২৫.৬২ মি)। দাগগুলো একই রঙের হবে। বোর্ড যদি স্বচ্ছ কাচের হয় তাহলে রেখা হবে সাদা, অন্য ক্ষেত্রে হবে কালো ৷ দাগ চওড়া হবে ৫ সেন্টিমিটার।


২. মধ্যবৃত্ত – মধ্যবৃত্ত ও সংরক্ষিত এলাকার বৃত্ত দুটির মাপ একই হবে। বৃত্তগুলোর ব্যাসার্ধ হবে ১.৮৩ মি। খেলা শুরু হওয়ার সময় দুই পক্ষের দুজন খেলোয়াড় মধ্যবৃত্তের মধ্যে অবস্থান করবে এবং অন্যান্য খেলোয়াড়রা বৃত্তের বাইরে থাকবে। বৃত্তের মধ্য থেকে জাম্প বলের মাধ্যমে বাস্কেটবল খেলা শুরু করতে হয়।

৩. রিং- কোর্ট থেকে রিংয়ের উচ্চতা ৩.০৫ মি । রিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ৬.২৫ মি ব্যাসার্ধের বৃত্তচাপ অঙ্কন করতে হবে।


৪. বল- আকৃতি গোলাকার হবে। বলটি সিনথেটিক রাবারের দ্বারা তৈরি হবে। বলের রং হবে কমলা ।
৫. ফাউল ও ভায়োলেশন- কোনো খেলোয়াড়ের সাথে বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়ের ইচ্ছাকৃত সংঘর্ষ ঘটলে তাকে ফাউল বলে। আর ভায়োলেশন হচ্ছে আইন অমান্য করা অর্থাৎ খেলার বিবিধ নিয়ম ভঙ্গ করাকেই ভায়োলেশন বলে।


ফাউল


ক. বিপক্ষকে ধরলে, ধাক্কা মারলে বা দুই হাত দিয়ে বিপক্ষের অগ্রগতিতে বাধা দিলে এবং আঘাত করলে;
খ. বল ড্রপ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিপক্ষের কাউকে জোর করে সরিয়ে দিলে;
গ. যার হাতে বল নেই তার গায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিলে;
ঘ. বিপক্ষ খেলোয়াড় বা আম্পায়ারের সাথে কোনোরূপ অসদাচরণ করলে।


ভায়োলেশন


ক. বিনা ড্রিবলিংয়ে বল নিয়ে দুই স্টেপের বেশি হাঁটলে বা দৌড়ালে ;
খ. বল হাতে করে দুই পা এদিক-সেদিক নড়াচড়া করলে;
গ. দুই হাত দিয়ে বল ড্রিবলিং করলে;
ঘ. নিজ দলের আয়ত্তে বল থাকার সময় বিপক্ষ দলের সংরক্ষিত এলাকার ভিতর তিন সেকেন্ডের বেশি অবস্থান করলে;
ঙ . পাঁচ সেকেন্ডের বেশি বলকে ধরে রাখলে (যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় নিকট থেকে প্রতিরোধ করে);
চ. নিজ অর্ধের মধ্যে থেকে বিপক্ষ দলের অর্ধেক মাঠে ৮ সেকেন্ডের মধ্যে বল নিয়ে প্রবেশ না করলে ।
৬. অফিসিয়াল— ১ জন রেফারি, ১ জন আম্পায়ার, ১ জন স্কোরার, ১ জন সহকারী স্কোরার, ১ জন টাইম কিপার, ১ জন ২৪ সেকেন্ড

 অপারেটর


৭. সময়কাল— প্রতি কোয়ার্টার দশ মিনিট করে মোট চার কোয়ার্টার খেলা হবে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ এবং তৃতীয় কোয়ার্টার শুরুর পূর্বে দশ মিনিট বিরতি থাকবে। এ ছাড়া প্রত্যেক কোয়ার্টারের মধ্যে ২ মিনিট বিরতি থাকবে ।
৮. স্কোরিং পয়েন্ট— খেলা চলাকালীন কোনো খেলোয়াড় বৃত্তচাপের বাইরে থেকে স্কোর করলে ৩ পয়েন্ট, বৃত্তচাপের ভিতর থেকে স্কোর করলে ২ পয়েন্ট এবং একটি ফ্রি থ্রো থেকে স্কোর করলে ১ পয়েন্ট হয়।
৯. খেলোয়াড়— বাস্কেটবল খেলা দুটি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় থাকে । কিন্তু খেলায় অংশগ্রহণ করে একসাথে ৫জন । বাকী ৭জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসাবে থাকে 

 

১০. টাইম আউট— একটি দল প্রথম দুই কোয়ার্টারে ১ বার করে ২ বার, তৃতীয় এবং চতুর্থ কোয়ার্টারে ৩ বার এবং প্রতিটি অতিরিক্ত পর্যায়ে ১ বার টাইম আউট নিতে পারেন। টাইম আউটের সময় ১ মিনিট।


১১. খেলার নিষ্পত্তি— নির্ধারিত সময়ে যদি উভয় দলের পয়েন্ট সমান হয়, তাহলে আরও অতিরিক্ত ৫ মিনিট খেলা হবে। তাতেও যদি মীমাংসা না হয়, তাহলে এভাবে ৫ মিনিট করে খেলা চলতে থাকবে যতক্ষণ খেলা মীমাংসা না 

কলাকৌশল


বাস্কেটবল খেলতে হলে দরকার দম, দৌড়াবার ও জাম্প দেওয়ার ক্ষমতা এবং সেই সাথে শরীরের ক্ষিপ্রতা। বাস্কেটবল খেলার মৌলিক কলাকৌশলগুলো হলো- দাঁড়াবার ভঙ্গি, বল ধরা, ড্রিবলিং করা, বল দেওয়া বা পাস করা, বল ছোড়া বা বাস্কেট করা, বিপক্ষকে পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।

বল ধরা

১. দাঁড়াবার ভঙ্গি (Stance) - বল নিয়ে দাঁড়াবার ভঙ্গিটি খেলার সময় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। খেলার মধ্যে অনেক সময় বল নিয়ে মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে পড়তে হয়, সফল আক্রমণ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। সঠিকভাবে দাঁড়াবার জন্য সব সময় পা দুটোকে ছড়িয়ে বা ফাঁক করে হাঁটু সামান্য ভেঙে দাঁড়াতে হবে।

২. বা ধরা (Catching)- বল এমনভাবে ধরতে হবে যাতে বলটা দখলে থাকে। বল ধরার সময় আঙ্গুলগুলোকে ছড়িয়ে দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলগুলো দিয়ে বলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাতের তালু দিয়ে বল ধরা ঠিক নয় ।

বল পাসিং

৩. বল পাস দেওয়া (Passing) - বল পাস
দেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে যে এ সময়
কব্জি ও কনুই শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে
অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং বল দেওয়ার সময় সাধারণত একটা পা সামনে ও আরেকটা পা পিছনে থাকে । বাস্কেটবল পাস দেওয়া হয় সাধারণত চেস্ট পাস, আন্ডারহ্যান্ড পাস, বাউন্স পাস, ওভারহেড পাস ইত্যাদি। সব ধরনের পাস শেখা দরকার। তবে চেস্ট পাস সবচেয়ে বেশি গুৰুত্বপূৰ্ণ ।

৪. ড্রিবলিং (Dribbling) -ড্রিবলিং এর সময় বলকে আঙ্গুলগুলো দিয়ে ঠেলা দিতে হয়। ড্রিবলিংয়ের সময় হাতের আঙ্গুলগুলোকে বলের উপর বেশ খানিকটা ছড়িয়ে রাখতে হয় । আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে রাখলে বলটির অনেক অংশের উপরই নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। হাতের কব্জি ও আঙ্গুলগুলোর নিখুঁত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সুন্দরভাবে বলকে মাটিতে ঠেলে দিলেই বল লাফিয়ে উপরে উঠে, তখন বল ধরা ও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। 

ড্রিবলিং

ড্রিবলিং করার সময় শরীরটাকে এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে যেকোনো সময় যেকোনো দিকে সহজেই অগ্রসর হওয়া যায়। মাথা সব সময় উঁচু ও সোজা থাকবে। ড্রিবলিংয়ের সময় দৃষ্টি সব সময় সামনের দিকে রাখতে হবে, যাতে নিজের দল ও বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে দেখা যায় ।

৫. পায়ের উপর ঘোরা (Pivoting) : যখন খেলোয়াড় বল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে, একটা পা একই জায়গায়
রেখে অন্য পা-টিকে যেকোনো দিকে যতবার ইচ্ছা ঘুরিয়ে নেয়, তখন তাকে ‘পিভটিং' বলে।

পিতটিং

৬. বাস্কেটে বল ছোড়া (Shooting) : বল সরাসরি বাস্কেটের মধ্যে শুট করা যায়। আবার প্রথমে বোর্ডে সোজাসুজিভাবে লাগিয়ে রিংয়ের মধ্যে বল ঢুকানো যায়। শুটিংয়ের বিভিন্ন কৌশল নিম্নরূপ-

সেট শুট 

ক. সেট শুঁট— এক জায়গায় দাঁড়ানো অবস্থায় যে শুট করা হয়, তাকে সেট শুট বলে। এক হাতে বা দুহাতে এই শুট করা যায়। এক হাত দিয়ে শুট করার সময় যে হাত দিয়ে শুট করা হয়, সে হাত বলের পিছনে থাকে এবং অন্য হাত বলের পাশে থাকে। শুটিংয়ের সময় পাশের হাত সরিয়ে নিচের হাত দিয়ে বলে ধাক্কা দিতে হয়। দুই হাতে শুটিংয়ের সময় উভয় হাত বলের পিছনে থাকবে এবং উভয় হাত দিয়েই বল ঠেলে দিতে হবে। সাধারণত ৪ থেকে ৮ মিটার দূর থেকে গোল করার জন্য সেট শুট ব্যবহার করা হয়।

লে-আপ শুট

 

খ. লে-আপ শুট— কাছ থেকে গোল করার জন্য সাধারণত এ শুট নেওয়া হয়। এতে খেলোয়াড়রা ড্রিবলিং করতে করতে সামনে এগিয়ে যায়। এক পা দিয়ে জোরে মেঝেতে আঘাত করে শরীর উঁচুতে তোলে। যে হাত দিয়ে বল মারবে সে হাত সোজা করে বল সরাসরি বাস্কেটে বা বোর্ডে আঘাত করে ফেলতে হয়।

| কাজ-১ : বাস্কেটবল খেলায় ড্রিবলিং কীভাবে করতে হয় তা করে দেখাও ।
| কাজ-২ : লে-আপ শটের কৌশল প্রদর্শন কর।
কাজ-৩ : চেস্ট পাসের কৌশলগুলো করে দেখাও ।

পাঠ-৪ : হান্ডবল 

ইতিহাস— বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যান্ডবল খেলার উৎপত্তি হয়েছে জার্মানিতে ১৮৯০ সালে। ১৯৪৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশন (IHF) গঠিত হয়। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে পুরুষ এবং ১৯৭৬ সালে মন্ট্রিল অলিম্পিকে মহিলা হ্যান্ডবল প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়। এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন (AHF) গঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। হ্যান্ডবল খেলা ১৯৮২ সালের এশিয়ান গেমসে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৫ সালে নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন (BHF) গঠন করা হয়। বর্তমানে এই খেলা বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

হ্যান্ডবল মাঠ

১. হ্যান্ডবল মাঠের দৈর্ঘ্য ৪০ মি এবং প্রস্থ ২০ মি । দৈর্ঘ্যের লাইনকে সাইড লাইন বা পার্শ্বরেখা এবং প্রস্থের লাইনকে প্রান্তরেখা বা গোললাইন বলে।

২. প্রতিটি গোলপোস্ট দৈর্ঘ্যে ৩ মিটার। উচ্চতা ভূমি হতে ক্রসবারের নিচ পর্যন্ত ২ মিটার।

৩. গোলপোস্টের সম্মুখ বরাবর মাঠের দিকে ৬ মিটার দূরে গোললাইনের সমান্তরাল ৩ মিটার লম্বা একটি লাইন টানতে হবে। গোলপোস্টের কোণা থেকে ৬ মিটার ব্যাসার্ধের দুটি বৃত্তচাপ অঙ্কন করে গোল লাইনের সাথে যুক্ত করলে গোলসীমা তৈরি হবে। অঙ্কিত লাইনটিকে গোল এরিয়া লাইন বলে। মাঠের সকল দাগ খেলার মাঠের অংশ বলে বিবেচিত হবে।

৪. ফ্রি থ্রো লাইন লম্বা দাগ দিয়ে (~~~~) ফাঁকা ফাঁকা করে অঙ্কন করতে হবে। লাইনটি গোল এরিয়া লাইনের সমান্তরালে ৩ মিটার বাইরে হবে।

৫. প্রতিটি গোললাইনের পিছনের অংশের ঠিক মধ্যবিন্দু হতে মাঠের দিকে ৭ মিটার দূরে গোললাইনের সমান্তরালে ১ মিটার লম্বা একটি সেভেন মিটার লাইন (পেনাল্টি থ্রো লাইন) টানতে হবে।


৬. প্রতিটি গোললাইনের পিছনের অংশের ঠিক মধ্যবিন্দু হতে মাঠের দিকে ৪ মিটার দূরে গোললাইনের
সমান্তরালে একটি গোলরক্ষক সীমা লাইন টানতে হবে।


৭. মাঠের দুই পার্শ্বরেখা থেকে পরস্পর যুক্ত করে মধ্যরেখা টানতে হবে। উভয় দিকে বদলি লাইন থাকবে। দলের সুবিধার্থে মাঠের খেলোয়াড়রা বদলি লাইনে বসে থাকবে।


৮. খেলার সময়সীমা হবে ২৫ মিনিট + ১০ মিনিট (বিরতি) + ২৫ মিনিট।


৯. নির্ধারিত সময়ে খেলা অমীমাংসিত থাকলে অতিরিক্ত ৫ মিনিট করে অর্থাৎ ৫ মিনিট + ১ মিনিট (বিরতি) + ৫ মিনিট খেলা হবে। এরপরও যদি ড্র থাকে, তাহলে আবার ৫ মিনিট + ১ মিনিট (বিরতি) + ৫ মিনিট খেলা চলবে।


১০. প্রত্যেক দলে ১২ জন খেলোয়াড় থাকে। মাঠে খেলতে নামে ৭ জন। কমপক্ষে ৫ জন খেলোয়াড় না হলে খেলা হয় না ।


১১. খেলা আরম্ভের সময় বা গোল হওয়ার পর বা বিরতির পর থ্রো অফের মাধ্যমে খেলা শুরু হবে ।


১২. খেলা পরিচালনার জন্য ২ জন রেফারি, ১ জন স্কোরার ও ১ জন সময়রক্ষক থাকবেন।


১৩. খেলোয়াড়রা বাহু, মাথা, দেহ, ঊরু ও হাঁটু দিয়ে বলকে ধরতে, থামাতে বা আঘাত করতে পারবে। বল ৩ সেকেন্ডের বেশি ধরে রাখতে বা ৩ পদক্ষেপের বেশি এগুতে পারবে না। হাঁটুর নিচের অংশ দিয়ে বল স্পর্শ করলে শাস্তিস্বরূপ বিপক্ষ দল ফ্রি থ্রো পাবে।


১৪. গোলরক্ষকের হাতে বল লেগে বা গোললাইন দিয়ে বল মাঠের বাইরে গেলে কর্ণার থ্রো-এর মাধ্যমে খেলা শুরু হবে ।


১৫. বিপক্ষ দলকে ফ্রি থ্রো দেওয়া হবে


ক. গোলরক্ষক নিয়মভঙ্গ করলে;
খ. ত্রুটিপূর্ণভাবে খেলোয়াড় বদলি করলে;
গ. মাঠের খেলোয়াড় গোলসীমা আইন ভঙ্গ করলে;
ঘ. প্রতিপক্ষের প্রতি অবৈধ আচরণ করলে;

ঙ. ত্রুটিপূর্ণ প্রো-ইন করলে ;
চ. যেকোনো থ্রো করতে ভুল করলে;
ছ. ত্রুটিপূর্ণ থ্রো-অফ করলে;
জ. অখেলোয়াড়োচিত আচরণ করলে;
ঝ. গোলরক্ষক গোলসীমার বাইরের বল নিয়ে গোলসীমায় প্রবেশ করলে; ঞ. গোলরক্ষকের কাছে গোলসীমায় ব্যাকপাস করলে।


১৬. বিপক্ষ দল পেনাল্টি থ্রো পাবে-


ক. মাঠের যেকোনো স্থানে কোনো খেলোয়াড় বা কর্মকর্তা আক্রমণকারী দলের একটি সম্ভাব্য গোলের সুযোগ অবৈধভাবে নষ্ট করে দিলে।
খ. একটি নিশ্চিত গোল করার সময় যদি কোনো অবৈধ বাঁশির সংকেতে তা নষ্ট হয়ে যায় ।
গ. মাঠে প্রবেশের অনুমতি নেই এমন কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কারণে যদি একটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট হয়।


১৭. বল পার্শ্বরেখা অতিক্রম করলে থ্রো ইনের মাধ্যমে খেলা শুরু হবে ।


১৮. গোলরক্ষক তার গোল এরিয়ার মধ্যে শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে খেলতে পারবে।


১৯. . সম্পূর্ণভাবে বলটি গোলের ভিতরের লাইন অতিক্রম করলে গোল হয়েছে বলে গণ্য হবে। যে দল বেশি গোল করবে সেই দল বিজয়ী হবে।

কলাকৌশল : হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবলের কলাকৌশল প্রায় একই। তবে হ্যান্ডবলে কতকগুলো বাড়তি সুযোগ পাওয়া যায়। কারণ হ্যান্ডবলে যে বল ব্যবহার করা হয়, তা বাস্কেট বলের চেয়ে ওজনে হালকা ও আকারে ছোট। তাছাড়া হ্যান্ডবলের নিয়মকানুন বাস্কেটবল থেকে অনেকটা সহজ ও সরল।

সম্মুখের বল ধরা

১. বা ধরা : হ্যান্ডবল খেলায়
বলটাকে বিভিন্নভাবে ধরা
যেতে পারে-

 ক. সম্মুখের বল ধরা

 খ. পার্শ্বের বল ধরা
গ. কোমরের নিচের বল ধরা
ঘ. মাথার উপরে বল ধরা
লাফিয়ে বল ধরা

 চ. মাটিতে গড়ানো বল ধরা । 

পরিস্থিতি অনুযায়ী উপরের যেকোনো নিয়মে এক বা দুই হাতে বল ধরা যায়। বল হাতে ধরার সময় হাতের আঙ্গুল ছড়িয়ে দিয়ে বলের উপর দৃষ্টি রেখে, কনুই ভেঙে বলটিকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আয়ত্ত করতে হয়।

বল ছোড়া

২. বল পাস দেওয়া : নিজের দলের খেলোয়াড়কে বল পাস দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল । যেহেতু হ্যান্ডবলের ওজন অনেকটা হাল্কা ও ছোট সেহেতু হ্যাভলকে এক হাতে ছুঁড়ে পাস দেওয়া অনেক সুবিধাজনক। তবে পরিস্থিতি অনুসারে দুই হাতেও পাস দেওয়া যেতে পারে। এক হাতে ছুঁড়ে পাস দেওয়ার সময় বলটাকে সাধারণত ডান হাত দিয়ে ঠিকভাবে ধরে কাঁধের লাইনের পিছনে হাতটাকে নিয়ে বাম পায়ের উপর ভর রেখে ছড়তে হয়। ৰাম হাতটাকে সামনে রেখে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বল পাস দেওয়াটা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন: কাঁধ বরাবর, কব্জি ঘুরিয়ে, হাত কোমরের নিচে এনে ও মাথার উপর দিয়ে পাস দেওয়া ইত্যাদি।

৩. গোলপোস্টে বা ছোঁড়া : হ্যাভবনে গোল করতে হলে বল ছুঁড়ে মারাটাকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। কারণ একটি নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে থেকেই গোল করতে হয়। বল ছুঁড়ে গোল করাটা বেশ কঠিন ব্যাপার। কারণ গোল পোস্টের আকার বেশ ছোট। তবে হ্যান্ডবল খেলতে গেলে চটপটে হতে হবে। সেই সাথে গতিবেগ, ক্ষিপ্রতা, নমনীয়তা অবশ্যই থাকতে হবে। বলকে বিভিন্নভাবে ছুঁড়ে গোল করা যায়। যেমন, সরাসরি ছুঁড়ে মারা, পাস দিয়ে ছুঁড়ে মারা, লাফিয়ে মারা, বলকে মাটিতে মেরে উঠানো ইত্যাদি।


৪. বল কাটিয়ে নিয়ে যাওয়া : হ্যান্ডবলকে হাতে করে তিন স্টেপের বেশি নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই আয়ত্তে রাখতে হলে বলকে অবশ্যই মাটিতে ড্রপ দিয়ে তুলতে হবে অর্থাৎ বাউন্স করাতে হবে। এভাবে যতক্ষণ খুশি বলকে কাছে রাখা যেতে পারে। আবার বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এক হাতেই বলকে বাউন্স করানো যায়। বলকে বাউন্স করতে করতে বিপক্ষকে কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে।


৫. বাধা দেওয়া : যখন বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় বলটাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বা গোল করতে যাচ্ছে, তখন তাকে এমনভাবে বাধা দিতে হবে, যাতে সে বলটাকে নিজ দলের অপর খেলোয়াড়কে বা গোলপোস্টে ছুঁড়ে না দিতে পারে। তার জন্য একাকী বা দুই-তিনজনে একসাথে হাত তুলে প্রাচীর তৈরি করে বা শরীরের অংশ দিয়ে বাধা দিতে হবে।

কাজ-১ : গোলপোস্টে বল ছোড়ার কৌশলগুলো করে দেখাও ।
কাজ-২ : পেনাল্টি থ্রো কেনো দেওয়া হয় ব্যাখ্যা কর।

পাঠ-৫ : হকি

ইতিহাস : যতদূর জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে পারস্য দেশে হকি খেলার মতো এক প্রকার খেলার প্রচলন ছিল। ফ্রান্সের লোকেরা 'হকেট' নামে খেলা শুরু করেন। হকেট একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ মেষপালকের লাঠি। আরও অনেক পরে ইংল্যান্ডের লোকেরা ফ্রান্সের কাছ থেকে এই খেলা শিখে হকে নাম দিয়ে খেলতে শুরু করে। ইংরেজি উচ্চারণ অনুযায়ী পরবর্তীতে এই খেলা হকি নামে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৪ সালে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন গঠিত হয়। অলিম্পিকে পুরুষদের হকি ১৯০৮ সালে এবং মহিলাদের হকি ১৯৮০ সালে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম বিশ্বকাপ হকি প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন গঠিত হয়।

মাপসহ একটি আন্তর্জাতিক হকি খেলার মাঠ

আইনকানুনঃ

১. দৈর্ঘ্য : হকি খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য ১০০ গজ এবং প্রস্থ ৬০ গজ।

২. প্রস্থ : মাঠের সকল রেখার প্রস্থ ৩ ইঞ্চি।

৩. লাইন : মাঠের বড় রেখাকে সাইড লাইন ও ছোট রেখাকে ব্যাক লাইন বলে ।


৪. শ্যূটিং সার্কেল : ব্যাক লাইনের সমান্তরালে ১৬ গজ দূরে মাঠের মধ্যে ৪ গজ দৈর্ঘ্যের একটি রেখা টানতে হবে। এই রেখার দুই দিক থেকে টেনে ব্যাক লাইনের সাথে যুক্ত করে একটি অর্ধবৃত্ত আঁকতে হবে ।


৫. ফ্লাগ পোস্ট: মাঠের প্রতি কর্নারে একটি করে ফ্লাগ পোস্ট থাকবে। ফ্লাগ পোস্টের উচ্চতা কমপক্ষে ৪ ফুট ও সর্বোচ্চ ৫ ফুট হবে।

৬. গোলপোস্ট : দুই খুঁটির ভিতরের দূরত্ব ৪ গজ এবং মাটির উপর থেকে ক্রসবারের নিচ পর্যন্ত উচ্চতা হলো ৭ ফুট। গোলপোস্ট ও ক্রসবারের রং হবে সাদা ।


৭. নেট : নেট ক্রসবার, গোলপোস্ট, সাইড বোর্ড এবং ব্যাক বোর্ডের সাথে ঢিলা করে লাগানো থাকবে ।


৮. বল : বলের ওজন ১৫৬ গ্রাম হতে ১৬৩ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। বলের রং হবে সাদা ।


৯. স্টিক : ২ ইঞ্চি ব্যাসের একটি রিং স্টিকের ভিতর দিয়ে চলে এলে স্টিকটি বৈধ বলে বিবেচিত হবে ।


১০. খেলোয়াড় : প্রত্যেক দলে ১৬ জন খেলোয়াড় থাকবে। খেলা চলাকালীন ১১ জন মাঠে খেলবে বাকী খেলোয়াড়রা অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসাবে থাকবে ।


১১. আম্পায়ার : দুজন আম্পায়ার খেলা পরিচালনা করেন।


১২. খেলার সময় : দুই অর্ধে খেলা হবে। প্রতি অর্ধের সময় ৩৫ মিনিট। অর্ধবিরতি ৫ হতে ১০ মিনিট। ১৩. খেলা আরম্ভ : সেন্টার পাসের মাধ্যমে হকি খেলা শুরু হয়। বলটি পুশ বা হিট করে সেন্টার পাস করতে হয় ।


১৪. অফসাইড : হকি খেলায় অফসাইড হয় না ।


১৫. গোলকিপার : গোলকিপার হাত দ্বারা বল থামাতে এবং ধরতে পারবে।


১৬. খেলোয়াড় যা করতে পারবে না—


ক. বল খেলার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে পিছনের দিকে স্টিক তোলা যাবে না ;
খ. বল খেলার সময় স্টিকের কোনো অংশ কাঁধের উপরে তোলা যাবে না ;
গ. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে হিট, হুক, চার্জ, স্টিক দিয়ে আঘাত করা যাবে না;
ঘ. বিপক্ষ খেলোয়াড়ের হাত বা কাপড় ধরে রাখা যাবে না।


১৭. ফ্রি হিট প্রদান করা হবে-


ক. আক্রমণকারী খেলোয়াড় বিপক্ষের ২৫ গজ এলাকার মধ্যে আইন ভঙ্গ করলে;
খ. রক্ষণকারী খেলোয়াড় তাদের শ্যুটিং সার্কেলের বাইরে ২৫ গজ এলাকার মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে আইন ভঙ্গ করলে;
গ. ২৫ গজ এলাকার মধ্যে যেকোনো খেলোয়াড় যেকোনো ধরনের অপরাধ করলে।


১৮. ফ্রি হিট করার প্রক্রিয়া-


ক. বলটি অবশ্যই স্থির থাকবে;
খ. সূচনাকারী বলটি পুশ অথবা হিট করতে পারবে;
গ. বলটি ইচ্ছাকৃতভাবে উঠিয়ে খেলা যাবে না;
ঘ. বিপক্ষ খেলোয়াড় বল হতে ৫ মিটার দূরত্বের ভিতরে অবস্থান করতে পারবে না।

১৯. পেনাল্টি কর্নার দেওয়া হয়: রক্ষণ দলের কোনো খেলোয়াড় ২৫ গজ (২৩ মিটার) লাইনের ভিতরে, তবে সার্কেলের বাইরে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো অপরাধ করলে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সার্কেলের ভিতরে অপরাধ করলে পেনাল্টি কর্নার দেওয়া হয়।


২০. পেনাল্টি কর্নার মারার প্রক্রিয়া: ব্যাক লাইনের উপর ১০ গজের চিহ্নিত স্থান থেকে পেনাল্টি কর্নার মারতে হবে। এই সময় অন্য সকল খেলোয়াড় ৫ গজ দূরে অবস্থান করবে। রক্ষণ দলের ৫ জন খেলোয়াড় (গোলরক্ষকসহ) গোললাইন ও ব্যাক লাইন বরাবর দাঁড়াতে পারবে। যিনি পেনাল্টি কর্নার মারবেন, তার একটি পা মাঠের ভিতরে ও অন্য পা ব্যাক লাইনে রাখতে হবে।


২১. পেনাল্টি স্ট্রোক দেওয়া হয়-


ক. সার্কেলের ভিতরে বলটি যখন আক্রমণকারী খেলোয়াড়ের নিয়ন্ত্রণে, তখন রক্ষণকারী খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃত অপরাধের মাধ্যমে একটি সম্ভাব্য গোল প্রতিহত করলে;
খ. সার্কেলের ভিতরে রক্ষণকারী খেলোয়াড় অনিচ্ছাকৃত অপরাধের মাধ্যমে একটি অবধারিত গোল প্রতিহত করলে;
গ. পেনাল্টি কর্নার শুরুর পূর্বেই রক্ষণকারী খেলোয়াড় বারবার ব্যাক লাইন ছেড়ে বের হয়ে এলে।
২২. পেনাল্টি স্ট্রোক মারার প্রক্রিয়া : গোললাইন হতে মাঠের দিকে ৭ গজের চিহ্নিত স্থান হতে পেনাল্টি স্ট্রোক মারতে হবে।

 গোলকিপার ও স্ট্রোক গ্রহণকারী ছাড়া অন্যান্য খেলোয়াড় ২৫ গজ লাইনের বাইরে অবস্থান করবে। পেনাল্টি স্পট হতে পুশ, ফ্লিক অথবা স্কুপ করে বলটি খেলতে হবে। কলাকৌশল :

 হকি খেলার মৌলিক কলাকৌশলগুলো নিম্নরূপ :

সোজা হিট

১. হিট, ২. স্টপিং, ৩. পুশ, ৪. ক্লিক, ৫. কূপ, ৬. ড্রিবলিং


১. সোজা হিট : বল শরীরের বাম দিকে রেখে আইনসিদ্ধভাবে স্টিক দিয়ে সজোরে আঘাত করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পাঠানোকে সোজা হিট বলে। এ সময় বাম হাত দিয়ে স্টিকের উপরের অংশ ধরতে হবে। ডান হাত, বাম হাতের নিচে সংযুক্ত থাকবে। উভয় হাতের মধ্যে ফাঁক থাকবে না। দৃষ্টি বলের উপর থাকবে।

স্টপিং

২. স্টপিং : আগত বল আয়ত্তে আনা এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করার জন্য যে কৌশল প্রয়োগ করা হয়, তাকে স্টপিং বলে। এ সময় বাম হাত দিয়ে স্টিকের উপরিভাগ এবং ডান হাত দিয়ে মাঝামাঝি অংশ ধরতে হবে। স্টিকের সমতল অংশ বলের দিকে ফেরানো থাকবে। পদদ্বয় পৃথক ও পাশাপাশি অবস্থান করবে। শরীরের ভর পায়ের পাতার উপর থাকবে। বলের উপর দৃষ্টি থাকবে।

৩. পুশ : বলের সাথে স্টিক লাগিয়ে কোনো শব্দ না করে বলটি মাটি ঘেষে গড়িয়ে দেওয়াকে পুশ বলে। এ সময় বাম হাত দিয়ে স্টিকের উপরের অংশে ধরতে হবে। ডান হাতের সাহায্যে স্টিকের প্রায় মধ্যভাগে ধরবে। বাম পা সামনে এবং ডান পা পিছনে থাকবে । যারা বাম হাতে খেলবে তারা উল্টোভাবে ধরবে।

ড্রিবলিং

৪. ফ্লিক : যখন একটি স্থির বা গড়ানো বল পুশ করা হয় এবং বলটি হাঁটু পর্যন্ত উপরে উঠে তখন তাকে ফ্লিক বলে।


৫. স্কুপ : একটি স্থির বা গতিহীন বলের নিচে স্টিক রেখে মাথার উপরের দিকে বল পাঠানোকে স্কুপ বলে ।


৬. ট্ৰিলিং : বলসহ সামনে এগিয়ে যাওয়াকে ড্রিবলিং বলে। বিপক্ষকে ধোঁকা দেওয়া এবং বিপক্ষের গোলপোস্টের দিকে বল এগিয়ে যাওয়ার জন্য ড্রিবলিং একটি কার্যকর কৌশল ।

কাজ-১ : হকি খেলার কৌশলগুলো প্রদর্শন কর।

পাঠ- - ৬: সীতার

ইতিহাস— বর্তমানে যে ধরনের সাঁতার আমরা দেখতে পাই, সে সাঁতার প্রথমে ইংরেজরা শুরু করে। সুইমিং শব্দ ইংরেজি সুইমিন থেকে এসেছে। ১৮৩৭ সালে লন্ডনে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। অলিম্পিকে ১৮৯৬ সাল থেকে পুরুষদের ও ১৯১২ সাল থেকে মহিলাদের সাঁতার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯০৮ সালে সাঁতারের আন্তর্জাতিক সংস্থা FINA (Federation International de Nation Amateur) গঠিত হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। সাঁতারের সাহায্যে দেহের সকল অঙ্গের ব্যায়াম হয় বলে একে পূর্ণাঙ্গ ব্যায়াম বলা হয়। স্বাস্থ্য, জীবন রক্ষা, ক্রীড়া ও আনন্দের জন্য সকলের সাঁতার শেখা উচিত।


সাঁতার শেখার সহায়ক জিনিসপত্র : সাঁতার শেখার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত জিনিসগুলো সহায়ক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ক. জীবন রক্ষার জন্য বয়া খ. মোটরগাড়ির চাকার টিউব গ. কলাগাছ ঘ. শুকনো নারিকেল *. ভাসমান কাঠ বা বাঁশ।

সাঁতার অনুশীলনের সময় সতর্কতা :
১. আবর্জনা ও বিপজ্জনক দ্রব্য মুক্ত করে সাঁতারের জায়গা নিরাপদ করা:
২. অল্প পানি বা অগভীর জায়গা বেছে নেওয়া ৩. কেউ ডুবে গেলে তুলে আনতে পারে, এমন অভিজ্ঞ একজন সাঁতারুকে কাছে রাখা
৪. ভাসমান বস্তু কাছে রাখা:

 ৫. আহার করার দেড় ঘণ্টার মধ্যে বা খালি পেটে সাঁতার অনুশীলন না করা,
৬. সম্ভব হলে লাইফ বোট বা লাইফ জ্যাকেট কাছে রাখা;

 ৭. লম্বা, মোটা ও শক্ত দড়ি বা বাঁশ কাছে রাখা;
৮. পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ ও বাথরুম ঠিক আছে কীনা পরীক্ষা করে নেওয়া;
৯. কফ বা থুথু বাইরে ফেলার ব্যবস্থা রাখা।

প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার চার প্রকার যথা :
ক. মুক্ত সাঁতার (Free Style )
গ. বুক সাঁতার (Breast stroke)
খ. চিৎ সাঁতার (Back stroke)
ঘ. প্রজাপতি সাঁতার (Butterfly)

কলাকৌশল 

ক. মুক্ত সাঁতার (ফ্রি স্টাইল) - এ সাঁতারকে ফ্রন্ট ক্রল বা মুক্ত সাঁতার বলে। এ স্টাইলে খুব দ্রুত সাঁতার কাটা যায় । দেহের অবস্থান : দেহটাকে উপুড় করে পানির সমান্তরালে রাখতে হবে। পানির মধ্যে মাথা মাঝে মাঝে পরিবর্তন করতে হয়- কখনো পানির উপর তুলে, আবার কখনো ঘাড়কে কাত করে। সাধারণত যারা কম দূরত্বের সাঁতার কাটে, তাদের মাথাটা একটু উপরের দিকে থাকে। আবার যারা মাঝারি বা লম্বা দূরত্বের সাঁতার কাটে তাদের মাথাটা নিচের দিকে থাকে।

মুক্ত সাঁতার

হাতের কাজ :


১. খাড়াভাবে হাতকে সোজা সামনে নিয়ে যেতে হবে; ২. হাতকে সোজা শরীরের পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে পানির সমান্তরালে রেখে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে;
৩. . যখন হাত মাথার সামনের পানি স্পর্শ করবে, ঠিক তখনি পানির ভিতর হাতের কাজ শুরু হবে ;
৪. হাত পানির ভিতর নিয়ে প্রথমে পানি টানতে হবে, পরে পিছনের দিকে ঠেলা দিতে হবে। এভাবে এক হাতের পর অন্য হাত অর্থাৎ ডান হাতের পর বাম হাতে পানি কেটে চলতে থাকবে।


পায়ের কাজ :


১. পায়ের কাজ কোমর থেকেই শুরু হয়। একের পর এক ডান পা ও বাম পা উঠা-নামা করে সামনে এগুবে ২. হাঁটুর কাছ থেকে পা ভাঁজ করতে হবে এবং পায়ের পাতা সোজা থাকবে;
৩. পায়ের গোড়ালি পানির উপরে আসবে না। পায়ের পাতা দিয়ে যখন পানিতে চাপ দেবে, তখন সেটা ১৮ ইঞ্চি পরিমাণ পানির নিচে যাবে;
৪. মনে রাখতে হবে, দুই হাতে একবার ঘুরে আসার মধ্যে ৬ থেকে ১২ বার পায়ের পরিচালনা করতে হবে।
শ্বাস-প্রশ্বাস : সাঁতার কাটার সময় মাথাটাকে ঘুরিয়ে পানির উপর মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া ও ছাড়া হয় । অর্থাৎ যে হাতটা পানির উপরে থাকবে, সেই দিকটায় মাথাটা ঘুরিয়ে নাক ও মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে এবং মাথাটা পানির ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। চিত্র দেখে কৌশল রপ্ত করতে চেষ্টা কর।


মুক্ত সাঁতারের নিয়মাবলি


১. মুক্ত সাঁতার আরম্ভ রকে উঠে শুরু করতে হয়; ২. মুক্ত সাঁতারে উপুড় হয়ে সাঁতার কাটতে হয়;
৩. পা পানির নিচে সাধারণত ১২-১৮ ইঞ্চি পরিমাণে যায়;

৪. অন্য প্রতিযোগীর লেনে গিয়ে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না ; ৫. পানির নিচে দিয়ে সাঁতার কাটা যাবে না;
৬. টার্নিংয়ের সময় শরীরের যেকোনো অংশ স্পর্শ করে টার্নিং নেওয়া যাবেঃ
৭. সমাপ্তি যেকোনো অবস্থায় করা যাবে;
৮. হাতের কাজ পানির নিচে S-এর মতো হবে।
চিৎ সাঁতার (ব্যাকস্ট্রোক)


দেহের অবস্থান : পানিতে শরীর চিৎ করে রাখতে হবে। সাধারণত মাথাটাকে পানির ভিতর রাখতে হয়। যাতে সম্পূর্ণ শরীরটা পানির উপর সমান্তরাল থাকে- যেন মাথাটা বালিশে রাখা আছে। দৃষ্টি পায়ের গোড়ালির দিকে
রাখতে হবে।

চিৎ সাঁতার

হাতের কাজ : হাত দুটো সোজাসুজি মাথার কাছাকাছি পানির ভিতর নিয়ে যেতে হবে। চিৎ সাঁতারে হাতের অবস্থান হবে এক এক করে। একহাত পানিতে পড়বে ও অপর হাত উপরে উঠবে এবং অন্য হাত পানিতে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকৰে ।


পায়ের কাজ : যুক্ত সাঁতারের মতোই অনেকটা পায়ের কাজ হয়। সাধারণত চিৎ হয়ে ফুটবল কিক মারার মতোই পায়ের কাজ ।
শ্বাস-প্রশ্বাস : শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে।


চিৎ সাতারের নিয়মাবলিঃ


১. চিৎ সাঁতার পানিতে নেমে হাতল ধরে আরম্ভ করতে হয়;
২. চিৎ সাঁতার চিৎ হয়ে কাটতে হয়;
৩. পা পানির নিচে সাধারণত ১৮-২৪ ইঞ্চি যায়;
৪. সাঁতারের সময় অন্যের লেনে যাওয়া যাবে না; ৫. চিৎ সাঁতারে পায়ের কিক হবে কোমর থেকে :
৬. এই সাঁতারে শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে ঘূর্ণন করা যাবে। তবে চিৎ অবস্থায় ;
৭. এই সাঁতারে শরীরের যেকোনো অংশ স্পর্শ করে সাঁতার সমাপ্ত করা যাবে, তবে চিৎ অবস্থায়।


বুক সাঁতার (ব্রেস্ট স্ট্রোক) :


দেহের অবস্থান : বুক সাঁতার কাটার সময় দেহটাকে প্রায় পানির সমান্তরালে রাখতে হয়। পিছনের অংশ পানির সমান্তরাল থেকে ১০ ডিগ্রির মতো পানির নিচের দিকে থাকে।

বুক সাঁতার

হাতের কাজ : দুই হাত পানির মধ্যে একসঙ্গে নিতে হবে। হাতের তালু একটু নিচে ও বাইরের দিকে রাখতে হয়। কনুই ভেঙে দুই হাত দিয়ে নিচের দিকে চাপ দিতে হয় এবং হাত দুটো বুকের সামনে আসার সাথে সাথে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হয়। হাত চালানো অনেকটা হৃৎপিণ্ডের আকারের মতো হয়। ঘোরা (টার্নিং) এবং সাঁতার শেষ করার (ফিনিশিং) সময় দুই হাত দিয়ে একই সাথে দেয়াল স্পর্শ করতে হবে।


পায়ের কাজ : দুপা দিয়ে হাঁটু ভেঙে পানিতে ব্যাঙের মতো পিছনের দিকে লাথি মারতে হয়। পায়ের পাতা বাইরের দিকে রাখতে হবে।


শ্বাস-প্রশ্বাস : মাথা সামনে তুলে শ্বাস নিতে হয় এবং পানির ভিতরে শ্বাস ছাড়তে হয় ৷
বুক সাঁতারের নিয়মাবলি :


১. 'ডাইভ' দিয়ে সাঁতার আরম্ভ করতে হবে;
২. 'টার্নিং ও ফিনিশিং'-এর সময় একসাথে দুই হাত দিয়ে সমাপ্তি ওয়াল স্পর্শ করতে হবে;
৩. সাঁতারের পূর্ণ সময় বুকের উপর শরীরের ভার থাকবে;
8.অন্য প্রতিযোগীর লেনে গিয়ে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না;

৫. পানির নিচ দিয়ে সাঁতার দেওয়া যাবে না;
৬. পা উপরে-নিচে তুলে সাঁতরানো যাবে না;
৭. উভয় হাত ও উভয় পা একই সময় এবং একই কায়দায় সঞ্চালন করতে হবে।
প্রজাপতি সাঁতার (বাটারফ্লাই)


দেহের অবস্থান : এই সাঁতারে শরীর খুব দ্রুত উঠানামা করে। পা দ্বারা যখন নিচের দিকে লাথি মারা হয় কোমর তখন উপরের দিকে উঠে আসে। পুনরায় পানি টানার জন্য হাতকে যখন প্রস্তুত করা হয়, তখন মাথা ও ঘাড় পানির নিচে চলে যায়। আবার যখন হাত দ্বারা পানি টানা হয় তখন ঘাড় ও মাথা পানির উপর দিকে জেগে উঠে। দুই পা জোড়া করে একই সাথে হাতকে প্রসারিত করতে হয়। মাথা উপরে থাকা অবস্থায় শ্বাস নিতে হয় ।

প্রজাপতি সাঁতার

হাতের কাজ : প্রজাপতি সাঁতারে হাতের কাজ হবে একসাথে। পানির উপরে হোক আর নিচে হোক, হাতকে আগে-পরে করা যাবে না। হাতের কনুইকে বাঁকা এবং উঁচু করে নিচের দিকে এবং বাহিরমুখী করে পানিতে চাপ দিতে হবে। হাত মাথা বরাবর সোজা রাখতে হবে। বুকের দুই পাশ থেকে শরীর ঘুরিয়ে বুকের নিচে হাতকে নিয়ে আসতে হবে। পানির নিচে হাতকে কোমর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।


পায়ের কাজ : প্রজাপতি সাঁতারে পায়ের অবস্থান হবে ডলফিন কিকের মতো। দুই পা কোনো অবস্থাতেই আগে পরে হলে চলবে না, পা একসাথেই উঠানামা করতে হবে। শরীর শোয়ানো অবস্থায় পা দুটো একত্রে সোজা করে রাখতে হবে। সাঁতারুকে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় কাঁধের উপর ভর করে ঢেউ খেলানোর ভঙ্গিতে পা সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।


শ্বাস-প্রশ্বাস : প্রজাপতি সাঁতারে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের কাজে মাথা সামনে ও পাশে উভয় দিকে করা গেলেও বিশ্বখ্যাত সাঁতারুরা সামনের দিকেই শ্বাস গ্রহণ করে থাকে। মাথাকে উপরে তোলা অবস্থায় মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করতে হয়। আর এটাই সহজতর। শ্বাস গ্রহণের সময় ঘাড় নমনীয় থাকবে । প্রজাপতি সাঁতারের নিয়মাবলি :


১. প্রজাপতি সাঁতার আর ব্লকে উঠে ঝাঁপ দিয়ে শুরু করতে হয়;
২. এই সাঁতার বুকের উপর ভর করে কাটতে হয়;
লেন পরিবর্তন করা যাবে না;
৪. পায়ের পাতা দিয়ে কিক মারতে হবে;
৫. প্রতি স্ট্রোকে নিঃশ্বাস না নিলেও চলবে;
৬. হাত কোমরের পিছনে যেতে পারে;
৭. টার্নিংয়ের সময় দুই হাত দিয়ে একসাথে ওয়াল স্পর্শ করতে হবে;
৮. সমাপ্তি রেখায় দুই হাত একসাথে স্পর্শ করতে হবে।


মিডলে রিলে : মিডলে সাঁতার দুই প্রকার- ব্যক্তিগত মিডলে ও দলগত মিডলে ।
ব্যক্তিগত মিডলে সাঁতারে একজন সাঁতারুকে ৪টি স্টাইলে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিচের স্টাইলসমূহ ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করতে হবে-


প্রজাপতি সাঁতার - চিৎ সাঁতার - বুক সাঁতার - যুক্ত সাঁতার



দলগত মিডলে সাঁতারে চারজন সাঁতারুকে ৪টি স্টাইলের নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। পর্যায়ক্রমিকভাবে স্টাইলের নাম দেওয়া হলো- 


 চিৎ সাঁতার -  বুক সাঁতার - প্রজাপতি সাঁতার - যুক্ত সাঁতার 

বিভিন্ন দূরত্বের বিভিন্ন স্টাইলের সাঁতারে ভালো করার জন্য ছেলেমেয়ে উভয়কে নিচে বর্ণিত দিকগুলোর প্রতি ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে।


১. সাঁতারের প্রত্যেক ফ্রি স্টাইলে হাত-পায়ের সঞ্চালন ও শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া এবং এর সমন্বয় পদ্ধতি
ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
২. প্রত্যেকটি সাঁতার স্টাইলে শুধু হাতের বা শুধু পায়ের সাহায্যে অনুশীলন করে হাত ও পায়ের শক্তি এবং দক্ষতা বাড়াতে হবে।

কাজ-১ : মুক্ত সাঁতারের কৌশল উল্লেখ করে পানিতে মুক্ত সাঁতার করে দেখাও ।
কাজ-২ : বুক সাঁতার কীভাবে করতে হয় তা পানিতে প্রদর্শন কর ।
কাজ-৩ : প্রজাপতি সাঁতারের কৌশল ব্যাখ্যা করে পানিতে তা প্রয়োগ করে দেখাও ।


বি:দ্র:- কোনো বিদ্যলয়ে পুকুর না থাকলে নীচু বেঞ্চে শুয়ে সাঁতার প্রদর্শন কর ৷

পাঠ-৭ : অ্যাথলেটিকস

ইতিহাস— পৃথিবীতে যত প্রকার খেলাধুলা আছে, তার মধ্যে দৌড়, লাফ-ঝাঁপ ও নিক্ষেপই সবচেয়ে প্রাচীন। আদিম যুগে মানুষকে বাঁচার জন্য শিকার বা প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে দৌড় দিয়ে, বাধা অতিক্রমের জন্য লাফ দিয়ে, শিকার বা শত্রুকে ঘায়েল করতে নিক্ষেপের সাহায্য নিতে হতো। পরবর্তীতে মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনে এই দৌড়, ঝাঁপ ও নিক্ষেপ ক্রীড়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। একই সাথে আবদ্ধ হয়েছে নিয়মকানুনের বেড়াজালে। দৌড়, ঝাঁপ, নিক্ষেপ এখন অ্যাথলেটিকস নামে অভিহিত। প্রাচীন গ্রিসে জিউস দেবতার সম্মানে অলিম্পিয়া পর্বতের নামানুসারে অ্যাথলেটিকসকে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ৭৭৬ খ্রি: পূর্বাব্দে গ্রিসে প্রথম অলিম্পিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৯৬ সালে গ্রিসের রাজা কর্তৃক আধুনিক অলিম্পিক প্রতিযোগিতা গ্রীসে পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন (I.A.A.F) এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অ্যামেচার অ্যাথলেটিক ফেডারেশন গঠিত হয় । 

নিয়মকানুন :
অ্যাথলেটিকসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা : 

ক. ট্র্যাক ইভেন্ট খ. ফিল্ড ইভেন্ট।
ক. ট্র্যাক ইভেন্ট- সকল প্রকার দৌড় ও হাঁটা।
খ. ফিল্ড ইভেন্ট- সকল প্রকার লাফ ও নিক্ষেপ 

ক. ট্র্যাক ইভেন্টকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়-
১. স্বল্প দূরত্বের দৌড়।

 ২. একে স্প্রিন্ট (Sprint) বলে।
মধ্যম দূরত্বের দৌড়।


৩. দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়।


স্বল্প দূরত্বের দৌড় : ১০০ মিটার স্প্রিন্ট, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট, ৪০০ মিটার স্প্রিন্ট, ১০০ মিটার হার্ডেল (মহিলা), ১১০ মিটার হার্ডেল (পুরুষ), ৪×১০০ মিটার রিলে, ৪০০ মিটার হার্ডেল।


মধ্যম দূরত্বের দৌড়: ৮০০ মিটার দৌড়, ১৫০০ মিটার দৌড়, ৪ x ৪০০ মিটার রিলে।


দীর্ঘ দূরত্বের দৌড় : ৩০০০ মিটার স্টিপল চেজ (পুরুষ), ৫০০০ মিটার দৌড়, ১০০০০ মিটার দৌড়, ম্যারাখন দৌড়, ২০ কিলোমিটার হাঁটা, ৫০ কিলোমিটার হাঁটা (পুরুষ)।


খ. ফিল্ড ইভেন্ট : লাফ ও নিক্ষেপ বিভাগের ইভেন্টসমূহকে ফিল্ড ইভেন্ট বলে। 

১. লাফ বিভাগ : দীর্ঘ লাফ, উচ্চ লাফ, ব্রি-লাফ (ট্রিপল জাম্প) ও পোলভন্ট।

২. নিক্ষেপ বিভাগ : গোলক নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ ও হাতুড়ি নিক্ষেপ ।


দৌড় আরম্ভ : যার সংকেতে ইভেন্ট শুরু হয়, তাকে আরম্ভকারী বলে। স্প্রিন্ট আরম্ভের সময় আরম্ভকারী বলবেন- অন ইওর মার্ক, সেট, বাঁশির শব্দ (on your mark, set fire)। মধ্যম ও দীর্ঘ দূরত্বে দৌড়ের সময় তিনি বলবেন- অন ইওর মার্ক, বাঁশির শব্দ। একজন প্রতিযোগী একবারও ফলস স্টার্ট নিতে পারে না। নিলে অযোগ্য বলে গণ্য হবে।

দৌড়

দৌড়ের সমাপ্তি : সকল দৌড়ের সমাপ্তি একই রেখায় হবে। শেষ রেখায় টর্সো (Torso) স্পর্শ করার পর্যায়ক্রমিক ধারায় প্রতিযোগীদের মধ্যে স্থান নির্ধারিত হবে। নাভি থেকে গলকণ্ঠ পর্যন্ত শরীরের অংশকে টর্সো বলে।

কাজ : ১– বিদ্যালয়ের মাঠে বিভিন্ন দৌড় অনুশীলন কর।

পাঠ-৮ঃ -৮ : গোলক, চাকতি ও বর্গা নিক্ষেপ

গোলক নিক্ষেপ : যদি প্ৰতিযোগী ৮ জন বা তার কম হয়, সেক্ষেত্রে ৬টি করে নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবে। যদি ৮ জনের অধিক হয়, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকে তিনটি করে নিক্ষেপ করবে, সেখান থেকে ৮ জনকে বাছাই করে উক্ত ৮ জন আরও তিনটি নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবে। একই নিয়ম চাকতি ও বর্শা নিক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে । প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

শটপুট ধরা

গোলক ধরার কৌশল :

ক. শটপুটকে প্রথমে বিপরীত হাতের তালুতে রাখতে হবে ;
খ. যে হাত দিয়ে নিক্ষেপ করবে, সে হাত দিয়ে ধরতে হবে;
গ. ধরার সময় শটপুটটা রাখতে হবে আঙ্গুলের Base-এর সাথে স্পর্শ করে; ঘ. নিক্ষেপ করার সময় সাপোর্ট থাকবে বৃদ্ধ ও কনিষ্ঠ আঙ্গুলের এবং শক্তি থাকবে অন্য তিন আঙ্গুলের উপরে।

একজন নিক্ষেপকারীর একটি সুযোগ নষ্ট হবে :

ক. বৃত্তের বাইরে থেকে পদক্ষেপ নিয়ে ভিতরে এসে নিক্ষেপ করলে;
খ. গোলকটি সেক্টর লাইনের দাগ স্পর্শ বা বাইরে পড়লে ;
গ. নিক্ষেপের সময় নিক্ষেপকারী বৃত্তের বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে;
ঘ. স্টপ বোর্ডের উপরিভাগ স্পর্শ করলে;
ঙ. নিক্ষেপকারী বৃত্তের সামনের অংশ দিয়ে বের হলে;
চ. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে নিক্ষেপ না করলে।

শটপুট সার্কেল ও সেক্টর

শটপুট সার্কেল : বৃত্তের ব্যাস দাগের ভিতর পর্যন্ত ২১৩৫ মি। বৃত্তের মাঝ বরাবর উত্তর পার্শ্বে ০.৭৫ মি বাড়ানো থাকবে। কোণ ৩৪.৯২ ডিগ্রি । বৃত্তের ভিতর হবে ঘসঘসে, যাতে প্রতিযোগীদে ঘুরতে সুবিধা হয়।

গোলক নিক্ষেপের স্টপ বোর্ড : গোলক নিক্ষেপের জন্য একটি কাঠের স্টশ বোর্ড থাকবে।

চাকতি নিক্ষেপঃ 

চাকতি ধরার কৌশ

চাকতি ধরার কৌশল :
ক. প্রথমে বিপরীত হাতে চাকতি রাখতে হবে;
খ. মসৃণ পিঠ উপরে থাকবে।
গ. যে হাতে নিক্ষেপ করা হবে, সে হাতের মাধ্যমে
তিন আঙ্গুলের প্রথম ভাঁজে চাকতি আঁকড়িয়ে ধরতে হবে:
ঘ. আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে রাখতে হবে।

চাকতি নিক্ষেপ

চাকতি নিক্ষেপটি কখন অকৃতকার্য বলে ধরা হয় :


ক. চাকতিটি সেক্টর লাইন স্পর্শ করলে বা বাইরে পড়লে।
খ. নিক্ষেপকারী নিক্ষেপের সময় বৃত্তের বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে;

 গ. নিক্ষেপের পর নিক্ষেপকারী বৃত্তের সামনের অংশ দিয়ে বের হলে;
ঘ. লোহার পাতের উপরের অংশ স্পর্শ করলে
৪. বৃত্তের ভিতর থেকে নিক্ষেপ না করলে।
চ. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ না করলে।

বর্শা নিক্ষেপ : বর্ণাটি অবশ্যই হাত দিয়ে কাঁধের উপর থেকে নিক্ষেপ করতে হবে। নিক্ষেপের সময় বর্শাটি হাত থেকে মুক্ত হওয়ার পর প্রতিযোগী নিক্ষেপ এলাকার মধ্যে শরীরের সম্পূর্ণ অংশ পিছনের দিকে ঘুরাতে পারবে। বর্শাটি নিক্ষেপের পর যতক্ষণ না মাটি স্পর্শ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিযোগী রানওয়ে ত্যাগ করতে পারবে না ।

বর্শা নিক্ষেপ

বর্শা নিক্ষেপটি অকৃতকার্য হিসেবে গণ্য হবে-

ক. সেক্টর লাইন স্পর্শ করলে বা বাইরে পড়লে ;
খ. বর্ণার মাথা প্রথমে আঘাত না করে শরীর আগে মাটি স্পর্শ করলে;
গ. আর্কের দাগ স্পর্শ করে নিক্ষেপ করলে;
ঘ. রানওয়ের নির্দিষ্ট রেখার বাইরের ভূমি স্পর্শ করে নিক্ষেপ করলে; ঙ. নিক্ষেপের পর পার্শ্বের বাড়ানো রেখা অতিক্রম করলে;
চ. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের মধ্য নিক্ষেপ করতে ব্যর্থ হলে।

পাঠ-১ : দীর্ঘ লাফ ও উচ্চ লাফ দীর্ঘ লাফ : 

দীর্ঘ লাফ ল্যান্ডিং এলাকা

 

প্রতিযোগিতার সময় ৮ জনের বেশি প্রতিযোগী লাফে অংশগ্রহণ করলে সকল প্রতিযোগীদের ৩টি লাফের সুযোগ দিতে হবে। দূরত্বের ক্রম অনুসারে প্রথম ৮ জনকে বাছাই করে তাদেরকে পুনরায় আরও ৩টি লাফের সুযোগ দিতে হবে। ৮ জন বা তার কম প্রতিযোগী লাফে অংশগ্রহণ করলে, সকল প্রতিযোগীকে ৬টি করে লাফ দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

একজন প্রতিযোগী দীর্ঘ লাফে কখন একটি সুযোগ হারার-
ক. প্রতিযোগী টেক অফ বোর্ডের সামনের ভূমি স্পর্শ করলে;
খ. টেক অফ বোর্ডের বাইরে দিয়ে লাফ দিলে;
গ. ল্যান্ডিংয়ের পূর্বে ল্যান্ডিং এরিয়ার বাইরের মাটি স্পর্শ করলে;
ঘ. লাফ শেষ করার পর পিছনের দিকে হেঁটে আসলে ;
ঙ. সামার সন্ট বা দুই পায়ে টেক অফ দিয়ে লাফ দিলে;
চ. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে লাফ দিতে ব্যর্থ হলে।


উচ্চ লাফ : উচ্চ লাফ শুরু করার পূর্বে প্রতিযোগীদের লাফের উচ্চতা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। প্রতি রাউন্ড শেষে কী পরিমাণ উচ্চতা বাড়ানো হবে সেই উচ্চতাও ঘোষণা করতে হবে। প্রতি রাউন্ড শেষে ক্রসবার অবশ্যই কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার উপরে উঠাতে হবে। প্রতিযোগীকে অবশ্যই এক পায়ে 'টেক অফ' নিতে হবে। একই উচ্চতায় একজন প্রতিযোগী পরপর ৩ বার ব্যর্থ হলে সে পরবর্তী উচ্চতায় লাফ দিতে পারবে না। (ব্যতিক্রম শুধু প্রথম স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে)।

উচ্চ লাফ

একজন প্রতিযোগী উচ্চ লাফে একটি সুযোগ হারায়


ক. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে লাফ দিতে ব্যর্থ হলে;
খ. জাম্প করার সময় ক্রসবার পড়ে গেলে;
গ. জাম্প করতে এসে জাম্প না করে ক্রসবারের নিচ দিয়ে অতিক্রম করলে;
ঘ. দুই পার্শ্বের স্ট্যান্ডের বাইরে শরীরের অংশ চলে গেলে। 

টাই :টাই অর্থ সমতা বা সমান। যখন একাধিক প্রতিযোগী একই উচ্চতা বা একই দূরত্ব অতিক্রম করে, তখন টাই হয় । টাই শুধু প্রথম স্থান নির্ধারণের জন্য করতে হয়। ২য় ও ৩য় স্থান যৌথভাবে দেওয়া হয়।


উচ্চতায় টাই হলে টাই ভাঙার নিয়ম :


ক. যে উচ্চতায় টাই হয়েছে, সে উচ্চতা যে কম চেষ্টায় অতিক্রম করেছে সে প্রথম হবে।
খ. উপরের নিয়মে টাই না ভাঙলে ১ম থেকে শেষ পর্যন্ত যার ক্রস কম সে ১ম হবে।
গ. এরপরেও যদি টাই না ভাঙে তাহলে উচ্চতা বাড়িয়ে বা কমিয়ে লাফ দেওয়াতে হবে, যে অতিক্রম করবে সে বিজয়ী হবে। এখানে প্রতিযোগীগণ ১টি করে লাফের সুযোগ পাবে 

দূরত্বের টাই হলে টাই ভাঙার নিয়ম :
ক. মোট নিক্ষেপ বা লাফের ভিতর ২য় সর্বোচ্চ দূরত্ব দেখতে হবে।
খ. এ নিয়মে টাই না ভাঙলে ৩য় সর্বোচ্চ দূরত্ব দেখতে হবে। (এভাবে ক্রমান্বয়ে যাবে) নিম্নে ছক এঁকে বুঝানো হলো- (দীর্ঘ লাফ)

এখানে দেখা যাচ্ছে, গ ও ঘ দুজনেই ৭.৬০ মি. দূরত্ব অতিক্রম করেছে। সূত্রমতে, এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূরত্ব দেখতে হবে। গ-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূরত্ব হলো ৭.৫৫ মি. ও ঘ-এর ৭.৫০ মি., সুতরাং গ ১ম ও ঘ ২য়
এবং ক ৩য়।


দীর্ঘলাফ, হুপস্টেপ এন্ড জাম্প, শটপুট, চাকতি, হ্যামার ও বর্শা নিক্ষেপের টাই হলে সব টাই ভাঙার নিয়ম একই।

কাজ-১ : গোলক ধরার কৌশল প্রদর্শন কর ।


| কাজ-২: কী কী কারণে দীর্ঘ লাফে একজন প্রতিযোগী একটি সুযোগ হারায় তা ব্যাখ্যা কর ।

 

Content added || updated By
Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
Please, contribute to add content into সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন.
Content
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.